খোয়াব- ভাবনার ভাষা সময়ের গদ্য

খোয়াব- ভাবনার ভাষা সময়ের গদ্য
সম্পূর্ণ গদ্যনির্ভর সাহিত্য পত্রিকা

Tuesday, January 4, 2011

খোয়াব-এর চতুর্থ সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান

বাংলা লিটল ম্যাগের নতুন ঠেক ইন্টারনেট। আর বিগত কয়েক বছরে বেশ অনেকগুলো বাংলা ই-ম্যাগাজিন অর্থাৎ কিনা ইন্টারনেট ভিত্তিক পত্রিকাই আত্মপ্রকাশ করে ফেলেছে। কিন্তু এই ই-ম্যাগগুলো সবই প্রায় গদ্য পদ্য মিশিয়ে, কিছু বা শুধুমাত্র পদ্যের। ‘খোয়াব’-এ কিন্তু পদ্য নেই, শুধু গদ্য আছে – সব রকমের গদ্য এখানে স্বাগত। আর এটাই ‘খোয়াব’-এর আত্মপ্রকাশের পিছনে মূল প্রেরণা – অন্তর্জালে অন্যধারার বাংলা গদ্যের একটা স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তোলা ও সেখান থেকে সারা পৃথিবীর গদ্যজনের কাছে তাকে পৌঁছে দেওয়া।

‘খোয়াব’-এর জন্ম ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে। ২০১০ -এর শেষে পৌঁছতে পৌঁছতে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়ে গেছে খোয়াবের পরপর তিনটি সংখ্যা। ‘খোয়াব’-এর তৃতীয় সংখ্যায় লিখেছেন মোট চল্লিশজন লেখক-লেখিকা। এঁদের মধ্যে অনেকেই অন্যধারার লেখক হিসাবে ইতিমধ্যেই বাংলা সাহিত্যের জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত। আবার কেউ বা উদিয়মান লেখক হিসাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এঁদের সবাইকে একসাথে করেই গড়ে উঠেছে খোয়াবের সাহিত্যসম্ভার। এর মধ্যেই খোয়াবে চোখ রেখেছেন বিশ্বের মোট একচল্লিশটি দেশ থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি পাঠক।
আচ্ছা আপনি কি গল্প লেখেন? নাকি প্রবন্ধ? নাকি কোনো বিদেশী গল্পের অথবা অন্য কোন ভারতীয় ভাষার গল্পের অনুবাদ করেন? কোনো গল্প/গল্পগ্রন্থ বা উপন্যাসের সমালোচনা লেখেন? অথবা কোন চলচ্চিত্রের সমালোচনা? নাকি ভ্রমণের গল্প লেখাই আপনার পছন্দ? চান কি খোয়াবের এই ব্যাপ্ত সংসারের আর তার থেকেও বড় স্বপ্নের অংশীদার হতে?
তাহলে যাই লিখুন না কেন, আপনার খেটেখুটে লেখা গদ্যটি খোয়াবে পাঠিয়ে দিন নীচে দেওয়া যে কোনো ঠিকানায় মেইল করে। কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারেন না? লেখাটি স্ক্যান করুন আর পাঠিয়ে দিন। আমরা আপনার লেখা টাইপ করে নেব। অথবা ফোন করুন। আমরা আপনার লেখা সংগ্রহ করে নেব।
খোয়াব হল আপনার। আপনার স্বপ্ন দেখার জায়গা। খোয়াব হল ভাবনার ভাষা, সময়ের গদ্য। 
ইমেলঃ khoyab@googlegroups.com
দূরভাষঃ +৯১ - ৯৪৩৩১ ৩৩৬৭০ (ভারত) (+91 94331 33670)
      +৯১ - ৯১৪৩০ ৮০১২১ (ভারত) (+91 91430 80121) 
খোয়াব দেখুনঃ http://www.khoyab.in/

খোয়াবের ব্রাউজার সাপোর্ট

এবারের খোয়াব ইউনিকোড-এ বানানো। অর্থাৎ কিনা খোয়াবের ওয়েব পাতার সব লেখা ইউনিকোড বাংলা এনকোডিং হিসেবে রয়েছে। আগের সংখ্যা "মেয়েদের কলম" অবধি কিন্তু খোয়াবের সব লেখা স্বচ্ছ ব্যাকগ্রাউন্ড বিশিষ্ট ছবি হিসাবে রাখা হয়েছিল। তাতে বাংলা লেখা যে কোন ব্রাউজারে বা অপারেটিং সিস্টেমে একইরকম দেখাত। তাহলে এবার ইউনিকোড করা হল কেন? আসলে সমস্যাটা হচ্ছিল দুটো জায়গায়। প্রথমত ছবি দিয়ে লেখা দেখাতে গেলে ওয়েব পাতাগুলো এবং সর্বোপরি খোয়াবের সাইটটা ভীষন ভারি হয়ে যাচ্ছিল। খোয়াবের ওয়েব পাতাগুলো ভারি হয়ে যাওয়ার ফলে ধীরগতির ইন্টারনেট সংযোগ থেকে খুলতে অনেক সময় নিচ্ছিল। অন্যদিকে সাইটের আকৃতি এত বড় হয়ে যাচ্ছিল যে কয়েকটি সংখ্যার পরে হয় আমাদের ওয়েব হোস্টিং-এর খরচা বাড়াতে হত, নয়তো খোয়াবের পুরানো সংখ্যাগুলো রাখা ক্রমশ মুশকিল হত। আর একটা সমস্যাও আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। ছবি মধ্যে কি লেখা দেখাচ্ছে তাত গুগলের মত সার্চ ইঞ্জিনগুলো বোঝে না, ফলে তাদের তালিকায় খোয়াবের লেখাগুলো অন্তর্ভূক্তও করেনা। এতে উৎসাহী পাঠকদের খোয়াবকে খুঁজে পেতে অসুবিধা হচ্ছিল নিশ্চিত। দ্বিতীয় সংখায় "মেয়েদের কলম"-এ আমরা এই সমস্যা এড়াতে নানা উপায় সন্ধান করেছি, কিন্তু সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ধরনের চেষ্টাকে এখন আর খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না। ফলে হিতে বিপরীত হবার সমূহ সম্ভাবনা। আবার 'বিজয়' বা' সমিতে'র মত ASCII বাংলা ফন্ট সার্চ ইঞ্জিনের কাছে কোন অর্থ বহন করবে না, কারন সার্চ ইঞ্জিন একে অর্থহীন ইংরাজী টেক্সট হিসাবে পড়বে। তাই সার্চ ইঞ্জিনের মন পেতে একমাত্র পথ ইউনিকোড বাংলা অক্ষর ব্যবহার। কিন্তু তাতেও মুশকিল কম নয়। বেশিরভাগ কম্পিউটারেই অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপি চলে। এক্সপি আবার বাই ডিফল্ট ইউনিকোড বাংলা সাপোর্ট চালু রাখে না। কন্ট্রোল প্যানেলে গিলে নানা কলাকৌশল করে একে চালু করতে হয়। আর চালু করার পরেও ইউনিকোড বাংলা দেখাতে কুৎসিত 'বৃন্দা' ফন্ট ব্যবহার করে। খোয়াব দেখার আগে যদি পাঠককে ফন্ট ডাউনলোড করে সিস্টেমে ইনস্টল করতে হয় তাহলেই হয়েছে আর কি। এবার উপায়? এই সময় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হয়ে হাতে এসে গেল CSS3 Font Embedding। কিন্তু তাতেও গোল। ইন্টারনেটের ব্রাউজার যুদ্ধে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ হল মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ও মোজিল্লা ফাউন্ডেশনের ফায়ারফক্স। খোয়াবের বেশির ভাগ পাঠকও এই দুই ব্রাউজার ব্যবহারকারী গোষ্ঠীর মধ্যেই বিভক্ত। এদিকে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ও মোজিল্লা ফায়ারফক্সকে একসাথে সাপোর্ট করা যাচ্ছে না, কারন এই দুই ব্রাউজার সম্পূর্ণ ভিন্ন ফর্মাটের এম্বেডেড ফন্ট ব্যবহার করে। অনেক খুঁজে পাওয়া গেল উপায়। একে উপায় না বলে হ্যাক বলাই ভাল। কারন এরকম করা CSS3 স্ট্যান্ডার্ডের নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু মজার কথা হল যে এই কৌশলটাই এই দুই ব্রাউজারেই একেবারে ম্যাজিকের মত কাজ করে। সিস্টেমে ইউনিকোড বাংলা সাপোর্ট চালু করা থাক বা না থাক, ওয়েব সাইটে ব্যবহৃত ফন্ট থাক বা না থাক, ব্রাউজার একেবারে ঠিকঠাক ফন্টে ঠিকঠাক বাংলা লেখা দেখিয়ে দেবে। কিন্তু ফ্যাচাং হল অপেরা ব্রাউজার নিয়ে। অপেরা ফন্টটা ঠিকঠাকই নিচ্ছে কিন্তু বাংলা লেখা ভাঙাচোরা দেখাচ্ছে। সিস্টেমে ইউনিকোড বাংলা সাপোর্ট চালু করলে তবেই দেখাচ্ছে ঠিকঠাক গোটাগোটা বাংলা লেখা। অতএব কি আর করা যাবে, যোগ করতে হল "বাংলা না এলে" নামের একটা পাতা। গুগল ক্রোম ব্রাউজারের ক্ষেত্রেও একই দাওয়াই লাগবে। তবে এর মধ্যে উপরি পাওনা দেখি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে ফায়ারফক্স খোয়াব সাইটে ঠিকঠাক কাজ করছে। অবশ্য লিনাক্স ব্যবহারকারীদের নিয়ে আমার বিশেষ উদ্বেগও ছিল না, কারন এঁরা হলেন গিয়ে যাকে বলে হ্যাকার শ্রেণীভুক্ত জীব। বাংলা লেখা ঠিকঠাক দেখতে যা করা দরকার তা নিজেরাই করে নিতে পারবেন। তাহলে আর কি? সবাই মন ভরে খোয়াব দেখুন আর খোয়াবকে আপনাদের মূল্যায়ন জানাতে থাকুন। আর আমাদের প্রার্থনা এই যে, অপেরা আর গুগল ক্রোম ব্রাউজার যেন CSS3 Font Embedding শীঘ্রই সাপোর্ট করতে শুরু করে।
খোয়াব - ভাবনার ভাষা, সময়ের গদ্য
KHOYAB - A Bengali Web Magazine with a Distinct Dream

Monday, December 20, 2010

প্রকাশিত হল খোয়াবের তৃতীয় সংখ্যা

অনেক দেরি হয়ে গেছে জানি। তবুও আপনাদের সামনে হাজির করলাম খোয়াবের তৃতীয় সংখ্যাএবার কোনো থিম নয়একেবারে শুধুই খোয়াব – পাখিদের বহুবর্ণ সব ডানার বিচিত্র রঙে ভরা, গদ্যময় খোয়াব। চল্লিশটি গদ্যময় বর্ণ সংযোজিত করতে গিয়ে যে বিলম্ব, তার জন্য আপনাদের কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। কিন্তু তার পাশাপাশি এই আশাও রইল যে, খোয়াব আপনাদের মূল্যবান মনযোগটুকু শেষ পর্যন্ত ঠিকই আদায় করে নিতে সক্ষম হবে, আর বিনিময়ে সমৃদ্ধ হবে আপনাদের ঋদ্ধ অভিমতে।
খোয়াব দেখুন : http://www.khoyab.in/ 

KHOYAB - A Bengali Web Magazine with a Distinct Dream
খোয়াব - ভাবনার ভাষা, সময়ের গদ্য

Saturday, September 11, 2010

আমার খোয়াব

আমি অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম এই পোস্টটি দেওয়ার কথা, হয়ে উঠছিল না। সম্প্রতি কফিহাউসের আড্ডায় এক বছর পূর্তি হওয়া উপলক্ষ্যে একটি পোস্ট লিখতে লিখতে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ছিল। সেইসব স্মৃতি অপূর্ন থেকে যাবে যদি খোয়াবের কথা না বলি। খোয়াবের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আজকে সেই কথাই বলব ঠিক করেছি এই পোস্টে।

অনেকদিন ইংরাজীতে ব্লগিং করে একটা সময় কেমন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ২০০৯ সালের মে জুন মাসের কথা। তখন আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি বাংলা ভাষায় ওয়েব ম্যাগাজিনের কথা। আমার কোন ধারনাই ছিল না এই বিষয়ে। প্রথমেই জানতে পারি সোনাঝুরি আর উড়ালপুলের কথা। জানতে পারি ইউনিকোড সম্পর্কে। এর আগে মাঝে মধ্যে বাংলাওয়ার্ডে বাংলায় লেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেখানে দুটো সমস্যা ছিল - এক তো কিবোর্ডের একটা ম্যাপিং মাথায় রাখতে হত, আর দ্বিতীয়তঃ বাংলাওয়ার্ড সিস্টেমে না থাকলে অন্য কোন এডিটরে ফাইল খুলতে অসুবিধে হত। যাইহোক, সেদিক থেকে ইউনিকোডে কপি পেস্ট করা যাবে জেনে বড় উৎসাহ পেলাম। খুলে ফেললাম একটা বাংলা ব্লগ। এই সময়েও আমি অভ্র কিবোর্ডের ব্যবহার জানি না। বিভিন্ন সাইট থেকে ইউনিকোড বাংলা লিখতাম।

তখন বাংলা ব্লগ ডায়রেক্টরি থেকে অন্যান্য বাংলা ব্লগ পড়তে পড়তে একটি অসাধারন কবিতার ব্লগ খুঁজে পেলাম। অদ্ভুত ভালো লেগে গেল। ব্লগটি থেকে আমি লেখকের পরিচিতি পড়ে কেমন করে জানি না মাল্যবানদার অর্কুট প্রোফাইলে পৌঁছে গেলাম। উনিও আমাকে বন্ধু করে নিলেন। তখন মাল্যবানদা জোর কদমে খোয়াবের জন্য কাজ চালাচ্ছেন। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আমি কবিতা লিখি, আমার একটা কবিতা নেবেন? মাল্যবানদা বললেন, খোয়াবে তো কবিতার পাতা থাকছে না। তুমি বরং একটা গদ্য লেখ। গল্প লিখতে না পার, অনুগল্প চেষ্টা কর।
আমি মুখে বললাম, আচ্ছা বেশ। কিন্তু মনে মনে ঠিক বুঝেছি এ আমার কর্ম নয়।

একদিন বেড়াতে বেরিয়ে একটা খাতা কিনে বাড়ি ফিরলাম। ঠিক করলাম এবার শুরু করা যাক। কিছু লিখেও ফেললাম। বলাই বাহুল্য এখন বুঝতে পারি সে লেখা পাতে দেওয়ার মত নয়। কিন্তু যে সদ্য সদ্য গল্প লেখা শুরু করেছে তার পক্ষে তখন সেই লেখাই অনেক। আমার এরকম দুটি লেখা সেদিন ফিরে এসেছিল সম্পাদকের কাছ থেকে। কিন্তু এই প্রত্যাখানে দমে যাই নি। বিদেশে আসার পরে রোমান বাথ বেড়াতে যাওয়ার ঘটনা লিখে পাঠিয়ে দিই আবার। খোয়াবের প্রথম সংখ্যা যারা পড়েছেন, তাঁরা হয়তো লেখাটি দেখে থাকবেন। আজ মুক্তকন্ঠে স্বীকার করি সেদিন ঐ দুটি লেখা ফেরত না এলে আমার কোনদিন গদ্য লেখাই হত না। খোয়াবের হাত ধরে এভাবেই আমার গদ্য লেখা শুরু। 

তৃতীয় সংখ্যার কথা বলব আরেকদিন।

Friday, July 9, 2010

খোয়াবের শিকড়-বাকড় - ৩

পত্রিকার নাম কি হবে? পত্রিকা করব তা মোটামুটি চুড়ান্ত হওয়ার পরে, এটাই আমাদের প্রধান মাথা ব্যাথার বিষয় হয়ে উঠল। নামটা অবশ্যই বেশ শিল্পসম্মত হওয়া চাই, আবার ইংরেজী বানানে খুব একটা খটমট হলেও মুশকিল। ওয়েব সাইট-এর ডোমেইন নেম পত্রিকার নামে হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আর ডোমেইন নেমের বানান ঠিক করতে গিয়েই যদি পাঠক ভিরমি খান, তো পত্রিকা দেখবেন কি করে? ২৮শে মে মাল্যবানদা সম্ভাব্য ৪০টি নামের একটা তালিকা মেইল করেছিলেন খোয়াবের সব সদস্যকে। এর মধ্যে পাঁচটি নাম আবার বোল্ড লেটারে আলাদা করে চিহ্নিত করা, অর্থাৎ কিনা এগুলি মাল্যবানদার পছন্দসই। এদের মধ্যে কোথায়ই কিন্তু 'খোয়াব' ছিল না। ওই দিনই দুপুর বেলায় আবার মাল্যবানদার আরও একটা মেইল। মেইলে বড় বড় কমলা হরফে লেখা - "আরেকটি নাম... খোয়াব/খোয়াবনামা"। এই 'খোয়াব' আর 'খোয়াবনামা' শব্দদুটোর মধ্যে কি যেন একটা ম্যাজিক ছিল, আমি এককথায় খোয়াবের সপক্ষে হাত তুলে দিলাম। মাথার মধ্যে আর একটা সম্ভাবনাও খেলে গেল, - "পত্রিকার নাম যদি হয় 'খোয়াব', তবে পত্রিকার মুখবন্ধের শিরোনাম 'খোয়াবনামা' দিলে কেমন হয়?"। ওই যে বললাম নামটার মধ্যে একটা কোথায় যেন ম্যাজিক ছিল, দেখলাম খোয়াবের বাকি উৎসাহীরাও হাত তুলে দিলেন বিনা বাক্যব্যয়ে।

Friday, June 11, 2010

খোয়াবের শিকড়-বাকড় - ২

বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়েই এক দৌড়ে উঠে পড়লাম একটা কলেজস্ট্রীটগামী বাসে, গন্তব্য কফিহাউস। ভিড়ে ঠাসা বাসে একটা হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই ভিতরে ভিতরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আর একটু পরেই আমরা তৈরী করতে বসব খোয়াবের পরিপূর্ণ রূপরেখা। উত্তেজনার চাপ কমাতে এক সময় চোখ বন্ধ করে মনটা একটু নিবিষ্ট করার চেষ্টা করলাম। মনটা একটা শান্ত হতেই মাথার মধ্যে ফ্ল্যাশ করে যেতে লাগল একটার পর একটা ঘটনা প্রায় ছবির মত। কতবার না হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয়ে যেতে বসেছে খোয়াব। গত ছটা মাস ধরে কখনো এক পা এগিয়ে ফের দুপা পিছিয়েছি, আবার কখনো একপা পিছনে থেকে একলাফে দুপা এগিয়েছি। কখন কেউ অনেক কিছু দায়িত্ব নেবার ইঙ্গিত দিয়েও হঠাৎই বিলকুল সরে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউ বা "পারব না - পারব না" করতেই বেখেয়ালে অতীব গুরুদায়িত্ব মাথায় নিয়ে বসেছেন। এত ওঠাপড়ার মধ্যেও খোয়াব কিন্তু ঠিকই দানা বেঁধেছে।

একটা নতুন বাংলা ওয়েব পত্রিকা বানাতে প্রথম উৎসাহী হন মাল্যবানদা। আলোচনার সূত্রপাত বাংলা ব্লগ বানানো থেকে। ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকা হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন মাল্যবানদা। আমি বলেছিলাম ব্লগের গঠন ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকার প্লাটফর্ম করার কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। বরং সংবাদপত্র হিসাবে ব্লগকে ব্যবহার করা অনেক সহজ। যাই হোক বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের ভবিষ্যত যে অন্তর্জালেই নিহিত তাতে মাল্যবানদার একপ্রকার দৃঢ় প্রত্যয়ই দেখেছিলাম। অন্তর্জালে প্রকাশনার ব্যয় কম, একবার প্রকাশ করে দিলেই যতজন খুশি পাঠকের কাছে পোঁছে যাওয়া যায়, ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঠকদের কাছে পোঁছে যাওয়াও অনেক সোজা, যে কোন সংখ্যা যতদিন খুশি আর্কাইভ করে রাখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ওপরে কাগজ বাঁচানোর পরিবেশ সচেতনাটাও কম জরুরি নয়। আমার ভাবনাটাও এখানেই মিলেছিল, শুধু প্রবল আপত্তি ছিল কবিতা নিয়ে। অন্তর্জালে যে কটি পত্রিকা দেখেছি তার সবকটাই কবিতায় ঠাসা। কোনটা শুধুই কবিতার পত্রিকা, আবার কোনটার সিংহভাগই হল কবিতা। যেখানে কবিতার এত ছড়াছড়ি, সেখানে অ-কবিদের ভিড় জমাটাই স্বাভাবিক। ফলে অন্তর্জালের পত্রিকার মান ছাপানো লিটল ম্যাগাজিনের তুলনায় বেশ হতাশাব্যঞ্জক বলেই মনে হচ্ছিল। তবে আমরা পত্রিকা করলে যে তা যে ছাপার জগতের লিটল ম্যাগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো মানেরই হবে, তা নিয়ে মাল্যবানদা অবশ্য যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। প্রথম থেকেই বলছিলেন, "প্রথম তিনটে সংখ্যার লেখা জোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দাও, পরের সংখ্যাগুলো থেকে আর লেখার জন্য ভাবতে হবে না। লেখকরা নিজে থেকেই লেখা পাঠাবেন।" মাল্যবানদার এই আশাবাদীতায় একশভাগ বিশ্বাস না করলেও, এটা বুঝেছিলাম যে লেখা সংগ্রহ করতে তিনি চেষ্টার কসুর করবেন না।

... ক্রমশ

Tuesday, June 8, 2010

খোয়াবের শিকড়-বাকড় - ১

সময়টা গত বছরের জুন মাসের গোড়ার দিক হবে। আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা তেমন করে জমে ওঠেনি। কিন্তু আকাশে মেঘ থাক না থাক, আগের মাসে আয়লা এসে ইন্টারনেটের সংযোগগুলো এমন ঘেঁটে দিয়ে গেছে যে, সে জট তখনও পুরোপুরি ছাড়েনি। তবুও তার মধ্যেই আমরা জনা চারেক উৎসাহী মূলত ইন্টারনেটকে সম্বল করে আর অহল্যার তিতিক্ষা নিয়ে, নিজেদের মধ্যে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি, একটা বাংলা অন্তর্জালিক পত্রিকার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে। আর একটু একটু করে দানা বেঁধে উঠছে আমাদের স্বপ্ন - আমাদের 'খোয়াব'। অর্কুটে বানিয়েছি খোয়াবের কমিউনিটি, নিজেদের মধ্যে বার্তা বিনিময় করতে বানাচ্ছি গুগল গ্রুপ - এই সব প্রস্তুতি চলছে আর কি। এর মাঝে ১১ই জুন অর্কুটে খোয়াবের কমিউনিটি ও একযোগে কয়েকটি বাংলা ব্লগে একযোগে একটা পোস্ট দেওয়া হল, খোয়াব দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। পোস্টের হেডিং - "খোয়াবের প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পথে"। পোস্টের বিষয়বস্তু মোটামুটি এই রকম - 

"বাংলা ই-ম্যাগাজিন খোয়াবের প্রথম সংখ্যা এখন আমাদের মগজস্থ অবস্থায় রয়েছে, আর একটু একটু করে কম্পুটারস্থ হচ্ছে। লেখা সংগ্রহ ও অবিরাম উৎসাহ প্রদানের কাজটা করছেন মাল্যবানদা, সম্পাদনার দুষ্কর কর্মটি চাপানো হয়েছে সুমন্তদার ঘাড়ে। মেঘদি করছেন ওয়েব সাইটের গ্রাফিক্স ডিজাইন আর আমি করছি যত রকম তথ্যপ্রযুক্তির কুটকচালির সমাধান। আমাদের প্রবল আশা, খোয়াবের প্রথম সংখ্যা এই পূজা/ঈদের আগেই অন্তর্জালে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। যারা খোয়াব কমিউনিটির সদস্য তাঁদের কাছে ইমেল মারফত এই পত্রিকাটির জন্মবার্তা যথাসময়ে পৌঁছে যাবে।" 

পরেরদিনই আমাদের কফিহাউসে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রথম খোয়াবের টিম একসাথে মুখোমুখি বসছে। একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল নিজের মধ্যে। কফিহাউসে বসেই অনেকগুলো জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্তর্জালের প্রায় সমস্ত বাংলা কমিউনিটিতে খোয়াবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার আর কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে আসা যাবে না।
... ক্রমশ