খোয়াব- ভাবনার ভাষা সময়ের গদ্য

খোয়াব- ভাবনার ভাষা সময়ের গদ্য
সম্পূর্ণ গদ্যনির্ভর সাহিত্য পত্রিকা

Friday, June 11, 2010

খোয়াবের শিকড়-বাকড় - ২

বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়েই এক দৌড়ে উঠে পড়লাম একটা কলেজস্ট্রীটগামী বাসে, গন্তব্য কফিহাউস। ভিড়ে ঠাসা বাসে একটা হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই ভিতরে ভিতরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আর একটু পরেই আমরা তৈরী করতে বসব খোয়াবের পরিপূর্ণ রূপরেখা। উত্তেজনার চাপ কমাতে এক সময় চোখ বন্ধ করে মনটা একটু নিবিষ্ট করার চেষ্টা করলাম। মনটা একটা শান্ত হতেই মাথার মধ্যে ফ্ল্যাশ করে যেতে লাগল একটার পর একটা ঘটনা প্রায় ছবির মত। কতবার না হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয়ে যেতে বসেছে খোয়াব। গত ছটা মাস ধরে কখনো এক পা এগিয়ে ফের দুপা পিছিয়েছি, আবার কখনো একপা পিছনে থেকে একলাফে দুপা এগিয়েছি। কখন কেউ অনেক কিছু দায়িত্ব নেবার ইঙ্গিত দিয়েও হঠাৎই বিলকুল সরে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউ বা "পারব না - পারব না" করতেই বেখেয়ালে অতীব গুরুদায়িত্ব মাথায় নিয়ে বসেছেন। এত ওঠাপড়ার মধ্যেও খোয়াব কিন্তু ঠিকই দানা বেঁধেছে।

একটা নতুন বাংলা ওয়েব পত্রিকা বানাতে প্রথম উৎসাহী হন মাল্যবানদা। আলোচনার সূত্রপাত বাংলা ব্লগ বানানো থেকে। ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকা হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন মাল্যবানদা। আমি বলেছিলাম ব্লগের গঠন ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকার প্লাটফর্ম করার কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। বরং সংবাদপত্র হিসাবে ব্লগকে ব্যবহার করা অনেক সহজ। যাই হোক বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের ভবিষ্যত যে অন্তর্জালেই নিহিত তাতে মাল্যবানদার একপ্রকার দৃঢ় প্রত্যয়ই দেখেছিলাম। অন্তর্জালে প্রকাশনার ব্যয় কম, একবার প্রকাশ করে দিলেই যতজন খুশি পাঠকের কাছে পোঁছে যাওয়া যায়, ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঠকদের কাছে পোঁছে যাওয়াও অনেক সোজা, যে কোন সংখ্যা যতদিন খুশি আর্কাইভ করে রাখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ওপরে কাগজ বাঁচানোর পরিবেশ সচেতনাটাও কম জরুরি নয়। আমার ভাবনাটাও এখানেই মিলেছিল, শুধু প্রবল আপত্তি ছিল কবিতা নিয়ে। অন্তর্জালে যে কটি পত্রিকা দেখেছি তার সবকটাই কবিতায় ঠাসা। কোনটা শুধুই কবিতার পত্রিকা, আবার কোনটার সিংহভাগই হল কবিতা। যেখানে কবিতার এত ছড়াছড়ি, সেখানে অ-কবিদের ভিড় জমাটাই স্বাভাবিক। ফলে অন্তর্জালের পত্রিকার মান ছাপানো লিটল ম্যাগাজিনের তুলনায় বেশ হতাশাব্যঞ্জক বলেই মনে হচ্ছিল। তবে আমরা পত্রিকা করলে যে তা যে ছাপার জগতের লিটল ম্যাগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো মানেরই হবে, তা নিয়ে মাল্যবানদা অবশ্য যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। প্রথম থেকেই বলছিলেন, "প্রথম তিনটে সংখ্যার লেখা জোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দাও, পরের সংখ্যাগুলো থেকে আর লেখার জন্য ভাবতে হবে না। লেখকরা নিজে থেকেই লেখা পাঠাবেন।" মাল্যবানদার এই আশাবাদীতায় একশভাগ বিশ্বাস না করলেও, এটা বুঝেছিলাম যে লেখা সংগ্রহ করতে তিনি চেষ্টার কসুর করবেন না।

... ক্রমশ

Tuesday, June 8, 2010

খোয়াবের শিকড়-বাকড় - ১

সময়টা গত বছরের জুন মাসের গোড়ার দিক হবে। আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা তেমন করে জমে ওঠেনি। কিন্তু আকাশে মেঘ থাক না থাক, আগের মাসে আয়লা এসে ইন্টারনেটের সংযোগগুলো এমন ঘেঁটে দিয়ে গেছে যে, সে জট তখনও পুরোপুরি ছাড়েনি। তবুও তার মধ্যেই আমরা জনা চারেক উৎসাহী মূলত ইন্টারনেটকে সম্বল করে আর অহল্যার তিতিক্ষা নিয়ে, নিজেদের মধ্যে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি, একটা বাংলা অন্তর্জালিক পত্রিকার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে। আর একটু একটু করে দানা বেঁধে উঠছে আমাদের স্বপ্ন - আমাদের 'খোয়াব'। অর্কুটে বানিয়েছি খোয়াবের কমিউনিটি, নিজেদের মধ্যে বার্তা বিনিময় করতে বানাচ্ছি গুগল গ্রুপ - এই সব প্রস্তুতি চলছে আর কি। এর মাঝে ১১ই জুন অর্কুটে খোয়াবের কমিউনিটি ও একযোগে কয়েকটি বাংলা ব্লগে একযোগে একটা পোস্ট দেওয়া হল, খোয়াব দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। পোস্টের হেডিং - "খোয়াবের প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পথে"। পোস্টের বিষয়বস্তু মোটামুটি এই রকম - 

"বাংলা ই-ম্যাগাজিন খোয়াবের প্রথম সংখ্যা এখন আমাদের মগজস্থ অবস্থায় রয়েছে, আর একটু একটু করে কম্পুটারস্থ হচ্ছে। লেখা সংগ্রহ ও অবিরাম উৎসাহ প্রদানের কাজটা করছেন মাল্যবানদা, সম্পাদনার দুষ্কর কর্মটি চাপানো হয়েছে সুমন্তদার ঘাড়ে। মেঘদি করছেন ওয়েব সাইটের গ্রাফিক্স ডিজাইন আর আমি করছি যত রকম তথ্যপ্রযুক্তির কুটকচালির সমাধান। আমাদের প্রবল আশা, খোয়াবের প্রথম সংখ্যা এই পূজা/ঈদের আগেই অন্তর্জালে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। যারা খোয়াব কমিউনিটির সদস্য তাঁদের কাছে ইমেল মারফত এই পত্রিকাটির জন্মবার্তা যথাসময়ে পৌঁছে যাবে।" 

পরেরদিনই আমাদের কফিহাউসে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রথম খোয়াবের টিম একসাথে মুখোমুখি বসছে। একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল নিজের মধ্যে। কফিহাউসে বসেই অনেকগুলো জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্তর্জালের প্রায় সমস্ত বাংলা কমিউনিটিতে খোয়াবের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার আর কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে আসা যাবে না।
... ক্রমশ