বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়েই এক দৌড়ে উঠে পড়লাম একটা কলেজস্ট্রীটগামী বাসে, গন্তব্য কফিহাউস। ভিড়ে ঠাসা বাসে একটা হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই ভিতরে ভিতরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। আর একটু পরেই আমরা তৈরী করতে বসব খোয়াবের পরিপূর্ণ রূপরেখা। উত্তেজনার চাপ কমাতে এক সময় চোখ বন্ধ করে মনটা একটু নিবিষ্ট করার চেষ্টা করলাম। মনটা একটা শান্ত হতেই মাথার মধ্যে ফ্ল্যাশ করে যেতে লাগল একটার পর একটা ঘটনা প্রায় ছবির মত। কতবার না হতে হতেও শেষ পর্যন্ত হয়ে যেতে বসেছে খোয়াব। গত ছটা মাস ধরে কখনো এক পা এগিয়ে ফের দুপা পিছিয়েছি, আবার কখনো একপা পিছনে থেকে একলাফে দুপা এগিয়েছি। কখন কেউ অনেক কিছু দায়িত্ব নেবার ইঙ্গিত দিয়েও হঠাৎই বিলকুল সরে দাঁড়িয়েছেন, আবার কেউ বা "পারব না - পারব না" করতেই বেখেয়ালে অতীব গুরুদায়িত্ব মাথায় নিয়ে বসেছেন। এত ওঠাপড়ার মধ্যেও খোয়াব কিন্তু ঠিকই দানা বেঁধেছে।
একটা নতুন বাংলা ওয়েব পত্রিকা বানাতে প্রথম উৎসাহী হন মাল্যবানদা। আলোচনার সূত্রপাত বাংলা ব্লগ বানানো থেকে। ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকা হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিলেন মাল্যবানদা। আমি বলেছিলাম ব্লগের গঠন ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্লগকে সাহিত্য পত্রিকার প্লাটফর্ম করার কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। বরং সংবাদপত্র হিসাবে ব্লগকে ব্যবহার করা অনেক সহজ। যাই হোক বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের ভবিষ্যত যে অন্তর্জালেই নিহিত তাতে মাল্যবানদার একপ্রকার দৃঢ় প্রত্যয়ই দেখেছিলাম। অন্তর্জালে প্রকাশনার ব্যয় কম, একবার প্রকাশ করে দিলেই যতজন খুশি পাঠকের কাছে পোঁছে যাওয়া যায়, ভৌগোলিক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাঠকদের কাছে পোঁছে যাওয়াও অনেক সোজা, যে কোন সংখ্যা যতদিন খুশি আর্কাইভ করে রাখা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ওপরে কাগজ বাঁচানোর পরিবেশ সচেতনাটাও কম জরুরি নয়। আমার ভাবনাটাও এখানেই মিলেছিল, শুধু প্রবল আপত্তি ছিল কবিতা নিয়ে। অন্তর্জালে যে কটি পত্রিকা দেখেছি তার সবকটাই কবিতায় ঠাসা। কোনটা শুধুই কবিতার পত্রিকা, আবার কোনটার সিংহভাগই হল কবিতা। যেখানে কবিতার এত ছড়াছড়ি, সেখানে অ-কবিদের ভিড় জমাটাই স্বাভাবিক। ফলে অন্তর্জালের পত্রিকার মান ছাপানো লিটল ম্যাগাজিনের তুলনায় বেশ হতাশাব্যঞ্জক বলেই মনে হচ্ছিল। তবে আমরা পত্রিকা করলে যে তা যে ছাপার জগতের লিটল ম্যাগের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো মানেরই হবে, তা নিয়ে মাল্যবানদা অবশ্য যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন। প্রথম থেকেই বলছিলেন, "প্রথম তিনটে সংখ্যার লেখা জোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকে দাও, পরের সংখ্যাগুলো থেকে আর লেখার জন্য ভাবতে হবে না। লেখকরা নিজে থেকেই লেখা পাঠাবেন।" মাল্যবানদার এই আশাবাদীতায় একশভাগ বিশ্বাস না করলেও, এটা বুঝেছিলাম যে লেখা সংগ্রহ করতে তিনি চেষ্টার কসুর করবেন না।
... ক্রমশ